উপজেলার সিংড়া ইউনিয়নের অন্তর্গত ঘোড়াঘাট-রানীগঞ্জ রোডের উপর বিরাহিমপুর কাচারী । কাচারীর পূর্ব ধারেই মইলা ( মরা করতোয়া ) নদী বেষ্টিত ত্রিভূজাকৃতি স্থলভাগ লক্ষ্য করা যায় । নাম বারপাইকের গড় । মৌজার নামও বারপাইকের গড় , মেŠজার মোট জমি ৩৯৩.৬০ একর ৫। ঘোড়াঘাট দুর্গ থেকে এস্থানের দূরত্ব উত্তর-পশ্চিমে প্রায় ১০কিলোমিটার । এখানে প্রাচীনকালে একটি দুর্গ ছির তার প্রমাণ মিলে ইতিহাস থেকে । গড়ের জমির পরিমাণ ৭৬.২৭ একর৬। নদীর স্রোত ঘেষে গড়ের চর্তুদিকে ৪০ ফুট প্রশস্ত ও ৮/১০ফুট উঁচু মাটির প্রাচীর আছে । বর্তমানে মাটির প্রাচীরের উঁচ্চতা আগের তুলনায় হ্রাস পেয়েছে। গড়ের চর্তুপাশে যে নদী / পরিখা আছে তার প্রশস্ততা পূর্ব দিকে ৫০ ফুট এবং পশ্চিম ও দক্ষিন দিকে ১২০ ফুট , গভীরতার কারনে খরা মৌসুমেও পানি থাকে । স্থানটি বড় গড় ও ছোট গড় দুটি অংশে এখন বিভক্ত । গড়ের ধারে প্রাচীন সামধির পাশেই আছে প্রত্নতত্ত্ব বিভাগের একটি সাইনবোর্ড ।
আলোচ্য গড়টি কোন আমলে সৃষ্টি তা সঠিক ভাবে জানা যায় না । তবে গৌড়ের সুলতান রুকনউদ্দিন বরবক শাহ-এর আমলে (১৪৫৯-১৪৭৬ খ্রি.) তার সেনাপতি শাহ ইসমাইল গাজী ১২ জন পাইকস এই দুর্গে আশ্রয় গ্রহন করেছিলেন । ভাগিনেয় মুহাম্মাদ শাহের উপর দুর্গ রক্ষার ভার দিয়ে গাজী উত্তরে চতরাহাটের কাছে জলমোকাম নামক স্থানে চলে যান । ১২ জন পাইক থাকার কারনে আলোচ্য দুর্গটির নাম বারপাইকের গড় হয়৭। তার আগে এটি কোন নামে পরিচিত ছিল জানা যায় না । ধারনা , এই গড়টি পাঠান আমলের আগে নির্মিত হয়েছিলু খুবসম্ভব কামরূপ কামতা রাজ্যের আক্রমন প্রতিহত করার লক্ষ্যে । রাজা নীলাম্বরের সময়ে দুর্গটি নির্মিত বলে কোচবিহারের ইতিহাসে ইঙ্গিত রয়েছে । কিন্তু গড়টি ঐ রাজার আমলেরও আগের বলে অনুমতি । যাহোক, মুসলিম শাসন আমলে দুর্গটি ধীরে ধীরে গুরুত্ব হারাতে থাকে । এর পরিবর্তে ঘোড়াঘাট দুর্গ প্রাধান্য লাভ করে । ক্রমে স্থানটি জঙ্গলকীর্ণ ও দুর্গম হয়ে পড়ে । পাকিস্তান আমলে স্থানীয় সাঁওতাল ও অন্যান্য সম্প্রদায়ের লোকেরা জঙ্গল পরিষ্কার করে আবাদযোগ্য করে তোলে । বিরাহিমপুর থেকে গড়ে পারাপারের জন্য একটি বাঁশের সাঁকো আছে । দিনাজপুর জেলার গেজেটীয়ার ( ১৯৯১ সনে মুদ্রিত ) থেকে আরো জানা যায় , প্রাচীনকালে গড়ের ভিতরে একটি অট্ট্রালিকা ছিল , বৃটিশ আমলেও তার সামান্য অস্তিত্ব ছিল । এখন সামান্য উঁচু মাটির ঢিবি দৃষ্টিগোচর হয় । সরেজমিনে বাস্তবাবস্থা দৃষ্টে নিশ্চিতভাবে বলা যায় , অতীতে এটা একটা সুরক্ষিত দুর্গ ছিল । গড়ের পূর্ব ধারে একজন মুসলমান পীরের মাজার আছে । সেটি দেওয়ান পীরের মাজার বা অচীন পীরের মাজার বলে স্থানীয়রা জানেন । তিনি কোথাকার লোক এবং কী তার পরিচয় সে সম্পর্কে বিশেষ কিছু জানা যায়না। স্থানীয মুসলমান হিন্দু বাসিন্দারা এ মাজারকে যথেষ্ট ইজ্জত করে এবং সিন্নী মানত করে থাকে । এই গড়কে কেন্দ্র করে নানা জনশ্রুতি স্থানীয়ভাবে প্রচার লাভ করেছে ।
Planning and Implementation: Cabinet Division, A2I, BCC, DoICT and BASIS